ডেস্ক রিপোর্ট :
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের বৃহত্তম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে দেশের ৪০ থেকে ৫০ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষায় রয়েছে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর কোর্স। এর মধ্যে বর্তমানে অনার্স কোর্স ৪ বছর মেয়াদী। তবে এখানে আছে তিন বছর মেয়াদী স্নাতক (পাস) কোর্সও। চার বছরের যে সম্মান বা অনার্স কোর্স রয়েছে তার মেয়াদ কমিয়ে তিন বছর করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস উপলক্ষে ঢাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা জানান শিক্ষা উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এম আমিনুল ইসলাম।
সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে এম আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চার বছরের অনার্স কোর্সকে তিন বছরের কোর্স করা হবে। বাকি এক বছরে ডিপ্লোমা ও কারিগরি ওপর ব্যাপকভাবে শিক্ষা দেওয়া হবে। তারপর তাদের দুটো সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।’
অধ্যাপক আমিনুল বলেন, ‘একটা অনার্সের সার্টিফিকেট দেওয়া হবে; আরেকটা ডিপ্লোমার সার্টিফিকেট দেওয়া হবে, যে সার্টিফিকেটটা ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে সবার কাছে। তার অনার্স পড়ার যে ড্রিম তাও ঠিক থাকল, আর চাকরিও তারা পাবে, অনেক ভালো চাকরি।’
নতুন ব্যবস্থায় কর্মসংস্থানে বেগ পেতে হবে না বলে মনে করেন বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম। তার ভাষায়, ‘একটা অভিনব অসাধারণ সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে মনে হয়।’
সমাজের গৎবাঁধা চিন্তাধারার প্রসঙ্গ টেনে অধ্যাপক আমিনুল বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে বাপ-মা সবসময় বলে, ছেলেকে বিএ, এমএ পাস করাব। ছেলে লেখাপড়া করুক আর না করুক, লেখাপড়া করে শিক্ষকতায় থাকুক আর না থাকুক, তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে অনার্স-মাস্টার্স পাস করবে। তা না হলে বিয়ের বাজারে তাদের অসুবিধা হবে। কন্যাপক্ষ যদি জানে ছেলে বিএ পাস; এমএ পাস না, অনার্স না তাহলে বিয়ে হবে না তাদের। ভালো বিয়ে ভেঙে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আবার এটাও ঠিক যারা পাস করবে, তারা কেউ চাকরিও করবে না। অনেকের চাকরি দরকারও নাই; বাপ-মার টাকা-পয়সা আছে, ব্যবসা-বাণিজ্য আছে- এগুলো নিয়েই তারা দিব্যি চলতে পারবে।’
ডিপ্লোমা বা কারিগরি ডিগ্রি নিয়ে অনেকেরই যে নাক সিঁটকানো মনোভাব রয়েছে, সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরতে গিয়ে বিশেষ সহকারী আমিনুল বলেন, ‘এটা একটা ট্যাবু, স্টিগমা রয়েছে গোটা দেশের ভেতর ডিপ্লোমা যদি পড়ে, কারিগরি যদি পড়ে, তাহলে এটা খুব খারাপ একটা বিষয় হবে। লোকের কাছে মুখ দেখাতে পারবে না। এটার জন্য খুব অভিনব ব্যবস্থা করতে যাওয়া হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে।’
কারিগরি শিক্ষার আমূল পরিবর্তন আনা হবে জানিয়ে অধ্যাপক আমিনুল বলেন, ‘যেটার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল দেশের জন্য, সেটা সবচেয়ে অনুন্নত অবস্থায় আছে। তাদের যে শিক্ষক দরকার, তার ১৮ পার্সেন্ট রয়েছে। তাদের প্র্যাক্টিকাল ও থিওরি আছে৷ প্র্যাক্টিকালের জন্য ল্যাবরেটরি নাই, ট্রেইনার নাই, টিচার নাই। তাই থিওরি পড়িয়ে দেওয়া হয়, পরে ভাইভা নেওয়া হয়। প্র্যাক্টিকাল করানোই হয় না, কিন্তু তার ভিত্তিতেই সার্টিফিকেট দিয়ে দেওয়া হয়। এটার আমূল পরিবর্তন করা হবে।’
তিনি বলেন, এদের শিক্ষা যেন যথাযথ হয়, ল্যাবরেটরি যেন যথাযথ থাকে, ট্রেইনার যেন যথাযথ থাকে এবং এদের কাজ চলাকালীন সময়ে তাদের জন্য যেন বাইরে ভালো চাকরির ব্যবস্থা করা হয়, এ জন্য তাদের ট্রেইন করা হবে।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক সাইদুর রহমান, কারিগরি ও মাদ্রাসার শিক্ষা বিভাগের সচিব কবিরুল ইসলাম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক অন্যদের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সিদ্দিক জোবায়ের।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-